শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১১:০৩ অপরাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম: স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের স্বার্থে একটি শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী গঠনের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বলেছেন, আক্রান্ত হলে বাংলাদেশ তার সমুচিত জবাব দেয়ার সর্বদা প্রস্তুত থাকবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কারো সাথে কখনো কোনো যুদ্ধে লিপ্ত হতে চাইনা। কিন্তু কেউ যদি আক্রমণ করে তাহলে আমরা তার সমুচিত জবাব দিতে পারি সে প্রস্তুতি আমাদের থাকবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা যা যা করণীয় তা করে যাচ্ছি।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ চট্টগ্রাম নৌ-জেটিতে দেশে প্রথমবারের মতো ‘নবযাত্রা ’এবং ‘জয়যাত্রা’ নামে দুটো ডুবোজাহাজকে আনুষ্ঠানিকভাবে কমিশনিং প্রদানকালে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই সকলের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে যাতে জনগণের সার্বিক উন্নতি করতে পারি। তবে, একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের যা যা প্রযোজনীয় তা আমরা সংগ্রহ করবো। কারণ, এগুলো হচ্ছে আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক। প্রধানমন্ত্রী এ সময় ডুবোজাহাজ দুটির কমান্ডিং অফিসারদ্বয়ের হাতে আনুষ্ঠানিক কমিশনিং ফরমান হস্তান্তর করেন এবং কমিশনিংয়ের আনুষ্ঠানিকতার অংশ হিসেবে চীন থেকে ক্রয় করা ডুবোজাহাজ দুটির নামফলক উন্মোচন করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ দুটি সাবমেরিন বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে যুক্ত হওয়ায় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার হওয়ার ক্ষেত্রে নজিরবিহীন সক্ষমতা অর্জন করলো।’ তিনি বলেন, বিশ্বের মাত্র গুটিকতক দেশ সাবমেরিন পরিচালনা করে থাকে। সেই তালিকায় আজ থেকে বাংলাদেশের নাম স্থান পাবে। এটি জাতি হিসেবে আমাদের জন্য অত্যন্ত সম্মান ও মর্যাদার একটি বিষয়। প্রধানমন্ত্রী এ সময় আশাবাদ ব্যাক্ত করে বলেন, নতুন কমিশনকৃত সাবমেরিন দুটি দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এবং কোনো সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম নৌঘাঁটিতে পৌঁছলে নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ এবং চট্টগ্রাম নৌঘাঁটির কমান্ডার রিয়ার অ্যাডমিরাল মো. আবু আশরাফ প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। প্রধানমন্ত্রীকে নৌবাহিনীর একটি চৌকস দল এ সময় রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। প্রধানমন্ত্রী পরে ত্রিমাত্রিক ফোর্স হিসেবে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর যুদ্ধ জাহাজ বিএনএস বঙ্গবন্ধু এবং নৌ-কমান্ডোদের মহড়াও প্রত্যক্ষ করেন। দুটি হেলিকপ্টার এবং দুটি এমপিএ বিমানও মহড়ায় অংশগ্রহণ করে। প্রধানমন্ত্রী এ সময় সাবমেরিন রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনায় সহায়তার জন্য স্থাপনার উদ্বোধন এবং বিএনএস শেখ হাসিনা নামে একটি পূর্ণাঙ্গ সাবমেরিন ঘাঁটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তিনি সাবমেরিন দুটি ঘুরে দেখেন এবং সাবমেরিনের যাবতীয় সক্ষমতার বিষয়ে তাঁকে অবহিত করা হয়। অনুষ্ঠানে নৌবাহিনীর ওপর একটি প্রামাণ্য চিত্র এবং দেশ ও জাতির শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, তিন বাহিনী প্রধানগণ, সরকারি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, সম্পাদক এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সিনিয়র সাংবাদিকবৃন্দ, কূটনীতিক, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত এবং উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে চীনের বন্দর থেকে সাবমেরিন দুটি গত ২২ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরে আসে এবং ২০১৪ সালের ১৪ নভেম্বর সাবমেরিন দুটি বাংলাদেশে হস্তান্তর হরা হয়। ডিজেল ইলেকট্রিক সাবমেরিন দুটি ৭৬ সেন্টিমিটার লম্বা এবং ৭ দশমিক ৬ মিটার প্রশস্ত এবং অত্যাধুনিক টর্পেডো ও মাইন সজ্জিত। সাবমেরিন দুটির সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ১৭ নটিক্যাল মাইল এবং এর ওজন ১ হাজার ৬০৯ টন। আইএসপিআর জানায়, সাবমেরিন দুটি পরিচালনার জন্য দুই দেশের নৌবাহিনীর সদস্যদের ট্রায়াল এবং প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য নৌবাহিনীর গুরুত্ব অনুধাবন করে ১৯৭৪ সালে জাতির পিতা নৌবাহিনীকে ‘নেভাল এনসাইন’ প্রদান করেছিলেন এবং দেশের প্রয়োজনে একটি আধুনিক ও শক্তিশালী নৌবাহিনী গঠনের দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছিলেন। সরকার প্রধান বলেন, জাতির পিতার দিকনির্দেশনা অনুসরণ করে নৌবাহিনীকে শক্তিশালী করার জন্য আজকে আমরা সাবমেরিন সংযুক্ত করতে পেরেছি। বিশ্বের মাত্র গুটিকতক দেশ সাবমেরিন পরিচালনা করে থাকে। সেই তালিকায় আজ থেকে বাংলাদেশের নাম স্থান পাবে। এটি জাতি হিসেবে আমাদের জন্য অত্যন্ত সম্মান ও মর্যাদার একটি বিষয়। তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে আমাদের সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই নৌবাহিনীকে আধুনিক ও যুগোপযোগী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়ন, যুদ্ধজাহাজ সংগ্রহ এবং বিদ্যমান জাহাজসমূহের অপারেশনাল সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বাস্তবমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করে। নৌবাহিনীকে নিয়ে সুদূরপ্রসারি চিন্তা বাস্তবায়নের ফলে ক্রমান্বয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনী বিশ্ব দরবারে একটি মর্যাদা সম্পন্ন বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলে নৌবাহিনীর জাহাজসমূহ উন্নত বিশ্বের নৌবাহিনীর ন্যায় জাতিসঙ্ঘের ব্যানারে বছরের পর বছর আন্তর্জাতিক জলসীমায় টহলরত থেকে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় এক অনন্য নজির স্থাপন করেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জন্য দু’টি সাবমেরিনকে আধুনিকায়ন, সাবমেরিনের সকল ক্রুকে প্রশিক্ষণ প্রদান এবং হস্তান্তর পরবর্তী দীর্ঘমেয়াদী কারিগরি সহযোগিতা প্রদানের মাধ্যমে চীন বাংলাদেশের প্রতি যে অকৃত্রিম সহযোগিতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো তার জন্য আমি গণচীনের সরকার, নৌবাহিনী ও সর্বোপরি গণচীনের জনগণকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী এ সময় সাবমেরিনারদের প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে চীনা নৌবাহিনীর যে সদস্যরা অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন তাদেরকেও ধন্যবাদ জানান। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর থেকে আঞ্চলিক শান্তি প্রতিষ্ঠা ও নিরাপত্তার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। মূলত ’৯৬ সালে সরকার গঠনের পর থেকেই এই পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রশ্নে তাঁর ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির পুনরুল্লেখ করে বলেন, আমাদের ভূখন্ড ব্যবহার করে আমাদের প্রতিবেশী দেশের সাথে অথবা দেশের ভেতরে কেউ যেন কোন ধরনের অশান্তির সৃষ্টি না করতে পারে এবং সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালাতে না পারে সে জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আমাদের ভূখন্ড কাউকে এ ধরনের সন্ত্রাসী কাজে ব্যবহার করতে দেবো না- সেটা আমাদের সিদ্ধান্ত। আমরা সেভাবেই আমাদের পদক্ষেপ নিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ হবে একটি শান্তপূর্ণ দেশ। আর শান্তি বজায় থাকলেই উন্নতি ত্বরান্বিত হবে- সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সূত্র: বাসস